আজকের খেলা ডেস্ক:
জাতীয় ফুটবলারদের ক্যাম্প শুরুর আগে বাফুফে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, দুবার করোনা পরীক্ষা দিতে হবে। প্রথমবার ব্যক্তি উদ্যোগে, দ্বিতীয়বার বাফুফের উদ্যোগে। জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ৩৬ ফুটবলারের মধ্যে ৩১ জন নিজ উদ্যোগে করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। বিশ্বনাথ ছাড়া বাকি সবারই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এরপর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের উদ্যোগে বুধ ও বৃহস্পতিবার মোট ২৪ ফুটবলারের করোনা পরীক্ষা করানো হয়।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১১ জনের রিপোর্টই পজিটিভ এসেছে। তবে গতকাল (৭ আগস্ট) আরও সাত ফুটবলার ও এক অফিশিয়ালের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ২৪ জনের মধ্যে ১৮ ফুটবলার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করা কভিড-১৯ রিপোর্টের সঙ্গে ব্যক্তি উদ্যোগে করা রিপোর্টের অমিল দেখে অবাক সবাই। ব্যক্তিগত উদ্যোগে করোনা টেস্ট করে নেগেটিভ হওয়া ফুটবলাররাই কি না বাফুফের উদ্যোগে করা টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন।
বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের বাকি চার ম্যাচের জন্য ক্যাম্প শুরু হওয়ার পরই করোনা আতঙ্কে পুরো বাংলাদেশ শিবির। যারা করোনা নেগেটিভ হয়ে গাজীপুরের সারাহ রিসোর্টে উঠেছেন, তাদের সবাইকে রাখা হয়েছে আইসোলেশনে। তারাও আছেন দুশ্চিন্তায়। কারণ, পজিটিভ হওয়া ফুটবলারদের সংস্পর্শে এসেছেন ফুটবলাররা।
গত মার্চ থেকেই ঘরবন্দি ফুটবলাররা। জাতীয় দলের ক্যাম্পের তারিখ ঘোষণা করার পর ফুটবলে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে পড়েন তারা। ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার জন্য যে যার অবস্থান থেকে করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট বাফুফের কাছে জমাও দিয়েছেন বেশির ভাগ ফুটবলার। ব্যক্তি উদ্যোগে করোনা পরীক্ষা করিয়ে পজিটিভ হন বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ।
বুধবার ক্যাম্পের প্রথম দিন সবার আগে তার করোনা আক্রান্তের খবর আসে। বিশ্বনাথ আর বাফুফের উদ্যোগে করোনা পরীক্ষা করাননি। তবে সন্ধ্যার পরই আসে আরও তিন ফুটবলার- নাজমুল ইসলাম রাসেল, সুমন রেজা ও ম্যাথিউস বাবলুর করোনা আক্রান্তের খবর। এর মধ্যে রাসেল ঢাকার বারিধারায় অবস্থিত একটি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে এসেছিলেন। দ্বিতীয় দিন করোনাক্রান্ত হন আরও সাতজন, যাদের বেশির ভাগই জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার- রবিউল হাসান, আনিসুর রহমান জিকো, শহিদুল আলম সোহেল, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সুশান্ত ত্রিপুরা, সোহেল রানা ও টুটুল হোসেন বাদশা। এদের মধ্যে সোহেল রানা ব্যক্তি উদ্যোগে করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে। সেখানে করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল তার।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে পজিটিভ। আর বুধবার যে ১২ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল, সেখানে চার ফুটবলারের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। শুক্রবার বাকি আটজনের মধ্যে সাতজনের রিপোর্ট আসে, যেখানে সবাই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হলেন- ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, মানিক হোসেন মোল্লা, মনজুরুর রহমান মানিক, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ইয়াসিন আরাফাত, বিপলু আহমেদ ও মাহবুবুর রহমান সুফিল। ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরীক্ষা করার এক কিংবা দু’দিনের ব্যবধানে বাফুফের তত্ত্বাবধানে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাই ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই রকম রিপোর্ট দেখে অবাক সবাই। নেগেটিভ রিপোর্টের ক্ষেত্রে ৩০ ভাগই নাকি ফলস হয় বলে জানান বাফুফে মেডিকেল কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডাক্তার আলী ইমরান, ‘শুধু খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে তাই নয়, অন্য সবার ক্ষেত্রেও যাদের রিপোর্ট নেগেটিভ হয়, তার ৩০ ভাগই কিন্তু ফলস।’
আজ আরও সাত ফুটবলারের করোনা পরীক্ষা করা হবে। স্বাভাবিকভাবে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে চলে যেতে হয়। অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের কারও মধ্যে কোনো উপসর্গ নেই। আর রিপোর্টের ভিন্নতা দেখে বাফুফে কর্তাদের মনেও সংশয় জেগেছে। যে কারণে পজিটিভ হওয়া ১৮ ফুটবলারকে সোমবার আবারও করোনা পরীক্ষা করাবে ফুটবল ফেডারেশন। ‘ফুটবলারদের করোনা আক্রান্ত খবরটি হতাশাজনক হলেও আমরা উদ্বিগ্ন নই। কারণ, বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচের জন্য দেড় মাসের প্রস্তুতিই যথেষ্ট। যারা আক্রান্ত হয়েছেন, আশা করি তারা দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন’, বলেছেন ন্যাশনাল টিমস কমিটির কো-চেয়ারম্যান তাবিথ আউয়াল।